ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেললাইনের অর্ধশতাধিক ক্রসিংই অরক্ষিত, নেই গেটম্যান, ঝুঁকি নিয়ে চলাচল

rel croচন্দনাইশ প্রতিনিধি  ।।

চট্টগ্রামদোহাজারী শাখা লাইনের কালুরঘাট রেলসেতু থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার রেললাইনের প্রায় অর্ধ শতাধিক লেবেল ক্রসিং বা রেলগেট সম্পূর্ণ উন্মুক্ত অবস্থায় রয়েছে। এসব রেললাইনে নেই কোন গেটম্যানও। এসব অরক্ষিত রেলগেট দিয়ে লোকজন চলাচলের পাশাপাশি যখন তখন ছোটবড় নানা ধরনের যানবাহন চলাচল করছে কোন বাধাবিপত্তি ছাড়াই। ফলে যে কোন সময় যে কোন মুহূর্তে এসব উন্মুক্ত রেলগেটে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। কয়েকবছর আগে এ লাইনটিতে ৬ জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করলেও অব্যাহত লোকসানের কারণে তা কমে দুই জোড়ায় নেমে আসে। ফলে এ লাইনটির সকল কার্যক্রমে ভাটা পড়ে এবং বন্ধ হয়ে যায় একাধিক স্টেশন। এ কারণে সংকুচিত হয়ে যায় যাত্রী এবং মালামাল পরিবহন।

গত ২০১৩ সালে দোহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট চালু হলে এটির জন্য ফার্নেস অয়েল পরিবহনে প্রতিদিনই বেশ কয়েক জোড়া তেলবাহী লরি যাত্রীবাহী দুইজোড়া ট্রেনের পাশাপাশি চলাচল করছে। নিয়মিত যাত্রীবাহী ট্রেন এবং তেলবাহী লরি চলাচল করলেও এ লাইনের অর্ধশতাধিক লেভেল ক্রসিংয়ে কোন ধরনের গেট বা গেটম্যান না দিয়ে সেগুলোকে আগের মতোই অরক্ষিত ফেলে রাখা হয়েছে।

বিশেষ করে চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়কের পাশাপশি রেললাইনের অবস্থান হওয়ায় লাইনটিতে সবচেয়ে বেশি রেলগেটের সৃষ্টি হয়েছে। রেললাইন সংলগ্ন তিনটি উপজেলা চন্দনাইশ, পটিয়া ও বোয়ালখালীর প্রায় প্রত্যেকটি বাণিজ্যিক এলাকায় প্রবেশ করতে এবং চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়কে উঠতে হলে একাধিক রেলগেট পার হতে হয়। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, শুধুমাত্র চন্দনাইশ উপজেলা এলাকায় দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশন, খানবাড়ি, জামিজুরী, সিকদারপাড়া, হাশিমপুর, নাসির মোহাম্মদপাড়া, খানহাট, কাঞ্চননগর ওয়ার্কশপ, কাঞ্চননগর রেলস্টেশন, মধ্যম মুরাদাবাদ ও উত্তর মুরাদাবাদের রেলগেটগুলো সম্পূর্ণ অরক্ষিত রয়েছে এবং এগুলো দিয়ে লোকজনসহ বিভিন্ন যানবাহন অবাধে রেললাইন পারাপার হচ্ছে। তাছাড়া পটিয়া উপজেলার মোজাফরাবাদ, খরনা, চক্রশালা, শাহচান্দ আউলিয়া মাদ্রাসা, জমিরিয়া মাদ্রাসা, পটিয়া রেলস্টেশন, খানমোহনা, ধলঘাট, বোয়ালখালী উপজেলার শাকপুরা, বেঙ্গুরা, গোমদণ্ডী, তুলাতল, বুড়িপুকুরপাড় এবং কালুরঘাট এলাকার রেলগেটগুলোও একইভাবে অরক্ষিত রয়েছে।

এ রেলগেটগুলোতেও কোন গেটম্যানকে কখনো দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি। কাঞ্চননগর রেলওয়ে ওয়ার্কশপ এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা ও মাদ্রাসা শিক্ষক আবুল বশর বলেন, ওয়ার্কশপের সামনের রেলগেট দিয়ে দিনেরাতে ইটভাটার ট্রাকসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক যানবাহন চলাচল করলেও এই গেটে কোনদিন কোন গেটম্যানকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি। কাঞ্চননগর এলাকার তিনটি রেলগেটই অরক্ষিত থাকায় প্রায় প্রতিমুহূর্তে এখানে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায় বলেও জানান এ মাদ্রাসা শিক্ষক।

দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন খানবাড়ি এলাকার সত্তরোর্ধ বাসিন্দা মোহাম্মদ খুইল্যা মিয়া ও কোরবান আলী জানান, স্বাধীনতার পরেও ট্রেন আসার সময় হলে দোহাজারী স্টেশনের আওতায় সবগুলো রেলগেটে একজন করে গেটম্যান লালপতাকা হাতে নিয়ে যানবাহন ও লোকজনকে লাইন পার হওয়া থেকে বিরত রাখতো। এ লাইনটিতে ট্রেনের চলাচল সংকুচিত হয়ে আসার পর থেকে এ গেটম্যানদেরকে আর কখনো দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি।

ফলে সবগুলো লেভেল ক্রসিংয়ই অরক্ষিত হয়ে পড়ে এবং ঝুঁকি নিয়েই মানুষ ও যানবাহন রেললাইন পার হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (প্রকৌশল) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, অনুমোদিত লেবেল ক্রসিংয়ের অনেকটিতেই গেটম্যান দায়িত্ব পালন করে। অননুমোদিত ক্রসিংগুলোতে দেখে শুনে চলাচল করার নির্দেশনা সম্বলিত সাইনবোর্ড লাগিয়ে নিরাপত্তা সতর্কতা দেয়া হয়েছে। তবে ধীরে ধীরে সবগুলো ক্রসিংয়ে গেটম্যান দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলেও জানান এ ব্যবস্থাপক।

 

পাঠকের মতামত: